1. crimeletter24@gmail.com : crimelet_crimelet :
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৫৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম

রাজশাহী মাউশির ডিডির অপসারণ চাই শিক্ষক সমিতি

  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১৪৭ ০৫ বার পঠিত

স্টাফ রিপোর্টারঃ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের উপ-পরিচালক (ভিডি) ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরীর, অপসারণ চেয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। চলতি বছরের ১৪ আগষ্ট রাজশাহী জেলা ও মহানগর শিক্ষক সমিতি (বাশিস) এই অভিযোগ করেছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আওয়ামী মতাদর্শী এই কর্মকর্তা, 
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের উপ-পরিচালক (ভিডি) ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী প্রভাববিস্তার করে এক অফিসেই দায়িত্বে রয়েছেন ১১ বছর। এমপিও দুর্নীতি, সনদ জালিয়াতি, বদলি বাণিজাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে তাকে  ঢাকায় বদলি করা হলেও আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে সাত মাসের মাথায় তিনি আবারো রাজশাহীতে ফিরেছেন। তার বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তিসহ রয়েছে নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ। একই কর্মস্থলে তিন বছরের বেশি সময় পার করেছেন-এমন কর্মকর্তাদের তথা জানতে চেয়ে গত বছরের ১৫মে মাউশির সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-১) দুর্গা রানী সিকদার দেশের সব উপ-পরিচালককে চিঠি দেন। তালিকা পাওয়ার পর মন্ত্রণালায় বেশকিছু কর্মকর্তাকে বদলি করে। কিন্তু ড, শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী  এখনো রাজশাহীতেই বহাল তবিয়তে রয়েছেন।আওয়ামী সরকার পতনের পর এবার তিনি রাজশাহী মহানগর বিএনপির এক প্রভাবশালী সাবেক নেতার স্ত্রীর  মাধ্যমে তদ্বির শুরু করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী রাজশাহীর প্রমথনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০১২ সালের নভেম্বরে তাকে মাউশির রাজশাহী অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসাবে পদায়ন করা হয়। বিগত ২০১৮ সালের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের  এক গোপনীয় প্রতিবেদনে মাউশির ১৭৫ কর্মকর্তা -কর্মচারীর নানা অনিয়মের চিত্র উঠে আসে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ড. শরমিনকে রাজশাহী থেকে ঢাকায় শাক্তিমূলক পাদলি করা হয়। এরপর প্রমথনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৌহিদ আরাকে মাউশির রাজশাহী অঞ্চদের ভারপ্রাপ্ত ডিডি করা হয়। কিন্তু বদলির পরই রাজশাহী ফিরতে তদবির শুরু করেন ড. শরমিন। ফলে ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তৌহিদ আরাকে এবার স্কুলে ফেরত পাঠানো হয়। আর সাত মাস পর আবার রাজশাহী অঞ্চলের ডিডি হয়ে ফিরে আসেন শরমিন ফেরদৌস। সেই থেকে তিনি এখনো বহাল আছেন। মাঝের সাত মাস বাদে তিনি প্রায় ১১ বছর ধরেই এ পদ আঁকড়ে আছেন। অভিযোগের পাহাড় মাথায় নিয়ে তিনি স্বপদে বহাল থাকায় শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে ভিডি শরমিনের সঙ্গে তার অনিয়ম-দুর্নীতির সহযোগী হিসাবে পরিচিত প্রোগ্রামার মো. মামুন ও উচ্চমান সহকারী আবদুল আওয়ালকেও ঢাকায় বদলি করা হয়েছিল। সাত মাসের মাথায় ভিডি শরমিনের সঙ্গে তারাও রাজশাহী ফিরে আসেন। এর আগে ২০১৮ সালেও তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করেছিল মাউশি। রাজশাহী কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ হধিববুর বৃতমানের তদন্তে তিনি রহস্যজনক কারণে পার পেয়ে যান। হবিবুর রহমান বলেন, ‘ডিডি সরাসরি ঘুস নিয়ে কাজ করেন-এমন প্রমাণ পাইনি। তার নামে অফিসের অনা কেউ ঘুস নিতে পারে, এটা সব অফিসেই হয়। তবে রিপোর্টে একটা কথা লিখেছিলাম, ডিডির আচরণগত সমস্যা আছে।
সম্প্রতি ভিডি শরমিন ফেরদৌসের বিরুদ্ধে  মাউশির সচিবের কাছে অবার লিখিত অভিযোগ করেছেন বাঘা উপজেলার এক ব্যক্তি। অভিযোগের সঙ্গে তিনি ড. শরমিনের অনিয়ম-দুর্নীতির ফিরিস্তিও তুলে ধরেছেন। এতে সচিবালয়ের পদস্থ কোনো কর্মকর্তাকে দিয়ে নিরপেক্ষভাবে অভিযোগগুলোর তদন্তের অনুরোধ করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, শরমিন ফেরদৌস শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য নিজের প্রতিনিধির মাধ্যমে ঘুস নেন। শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। তার সেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে  শিক্ষক কথা বললেই তাকে তিনি রাজশাহী বিভাগের বাইরে বদলি করে দেন। তিনি শারমিন জনবল কাঠামো ও নীতিমালা-২০২১ লঙ্ঘন করে ২০২২ সালে রাজশাহীর বিবি হিন্দু একাডেমির সহকারী শিক্ষক মনিকা রানী পালকে এমপিওভূক্ত করে। মনিকা এক বিষয়ে পাশ করলেও তাকে অন্য বিষয়ের শিক্ষক হিসিবে
টাকার বিনিময়ে এমপিও করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ১২ বছরের অভিজ্ঞতা না থাকলেও তিনি রাজশাহীর চারঘাটের নিমপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসাবে ইমদাদুল হকের এমপিও করে দেন। জাল সনদের মাধ্যমেই ডিডি শরমিন তার এমপিও করেন। পরে মাউশি মহাপরিচালকের কার্যালয় অনিয়ম ধরা পড়লে ইমদাদুল হকের বেতন বন্ধ করে দেয়। তবে ভিডি শরমিনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্তা নেওয়া হয়নি।
একইভাবে জাল সনদের মাধ্যমে বাঘ্য উপজেলার চক রাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জেমমিন আরা বেগমের এমপিও করে দিয়েছেন ডিডি শরমিন। পরে মহাপরিচালকের কার্যালয় জেসমিন বেগমেরও বেতন বন্ধ করে দেয়। কিন্তু ডিডি আছেন বহাল তবিয়তে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, বাঘার কেশবপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান বিএড স্কেলের জন্য প্রথমে ঢাকার এক ইউনিভার্সিটির জাল সনদ দিয়ে এমপিওর আবেদন করেন। ডিডি শরমিন ফেরদৌস প্রথমে তা বাতিল করে দেন। তবে ৫ মাসের মাথায় দালালের মাধ্যমে দুই লাখ টাকা নিয়ে ডিডি শরমিন তাকে বিএড স্কেল দেন। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, নওগাঁর আত্রাইয়ের খাঁন জোর জয়দাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী গ্রন্থাগারিক নাজমা আক্তার বানু, রাজশাহীর পুঠিয়ার গোটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক মোজাফ্ফর হোসেন ও দুর্গাপুরের পানানগর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রোকনুজ্জামানের কাম্য শিক্ষকতা যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ডিডি শরমিন তাদের এমপিও করে দিয়েছেন।
এদিকে শিক্ষকদের করা অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী প্রায় ১৪ বছর ধরে উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত), মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, রাজশাহী অঞ্চল, রাজশাহীতে কর্মরত আছেন। তাঁর অত্যাচারে  রাজশাহী অঞ্চলের সকল শিক্ষক কর্মচারী বিভিন্ন ভাবে হয়রানি ও নাজেহাল হয়ে আসছেন। তিনি সরকারি বিধি অমান্য করে বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন, উচ্চতর স্কেল প্রাপ্তির ফাইল বাতিল করেন এবং পরবর্তীতে দালালের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে কাজ গুলো করে থাকেন। উদাহরণ স্বরূপ স্নাতক পর্যায়ের মার্কসিটে Chemistry di স্কুলে সংক্ষেপে Chem লেখা আছে। পূর্ণ Chemistry লেখা নাই তাই তিনি Chem কে রসায়ন নয় ধরে ফাইল বাতিল করেন এরকম অসংখ্য উদাহরণ আছে। তাছাড়া তার অধীনন্ত অফিসার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। সকল শিক্ষক কর্মচারীদেরকে তুই-তুকারি করে অবজ্ঞা করে থাকেন। একাধিকবার তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ এবং মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেও কাজ হয় নি। কোন এক অদৃশ্য শক্তির বিনিময়ে সকলকে বৃদ্ধা আঙ্গুলী দেখিয়ে এখানো বহাল তবিওয়তে রয়েছেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিডি শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, ‘সনদ যাচাইয়ের প্রথম কজ স্কুল কমিটির পরে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হয়ে ৬৭টি উপজেলার কাগজপত্র আমার কাছে আসে। যেগুলো অনলাইনে যাচাই করার সুযোগ থাকে, সেগুলো আমরা করি। অনেক পুরোনো সনদ অনলাইনে যাচাইয়ের সুযোগ থাকে না। সেটা আমরা করিও না। ফাইল আসার পর ১০ দিনের মধ্যে আমাকে অগ্রগামী করতে হয়। আমি এত যাচাই করতে গেলে ১০ দিনে ১০টা ফাইলের কাজও শেষ করতে পারব না।’
তিনি বলেন, ‘তিন ধাপ পেরিয়ে যখন কাগজ আমার কাছে আসে, তখন এটাকে সঠিক বলেই ধরে নেওয়া যায়। সনদ জাল হলে এর জন্য একমাত্র দায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক। আমার দায় নেই।’ অনিয়মের মাধ্যমে এমপিও করে দেওয়ার অভিযোগ তিনি পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন। শিক্ষক সমিতির করা অভিযোগ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলে তিনি দাবি করেছেন।
একই দপ্তরে ড, শরমিন ফেরদৌসের ১১ বছর ধরে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরকারি মাধ্যমিক অধিশাখার যুগ্মসচিব মো. আবদুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ