মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ মুন্সীগঞ্জে হত্যা দুর্নীতি বিভিন্ন কর্মকান্ডে মামলায় গ্রেপ্তার নেই গডফাদাররা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন আহম্মেদসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে কতিপয় নেতাকর্মীদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে জমি দখল, টেন্ডারবাজি ও অবৈধ বালু মহল মাদক ব্যবসার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করার নানা অপকর্ম দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত রবিবার (৬ অক্টোবর) দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন আহম্মেদ, তার স্ত্রী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সোহানা তাহমিনা, সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসউজ্জামান আনিস, মীর কাদিম পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. শহিদুল ইসলাম শাহিন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আফসার উদ্দিন ভূঁইয়া আফসুর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তারা দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
দুদকের এই কর্মকরা আরও জানান, মহিউদ্দিন আহম্মেদ ৪টি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মালিক এবং তার স্ত্রী সোহানা তাহমিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে চাঁদাবাজি, জমিদখল ও অন্যান্যভাবে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করেছেন। তার অবৈধ সম্পদের মধ্যে রয়েছে– মোহাম্মদপুর ইকবাল রোডে ১৭৪.৯০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট যার মূল্য ৭৫ লাখ টাকা, ১৫ লাখ টাকার ১টি ল্যান্ড ক্রুজার টয়োটা গাড়ি। এছাড়া তাদের আরও অনেক সম্পদ নামে-বেনামে রয়েছে।
অভিযোগ সংশ্লিষ্ট আনিসুজ্জামান আনিসের মুন্সীগঞ্জ শহরে ৩ হাজার ৯৬০ বর্গফুট বিশিষ্ট ‘মুন্সীগঞ্জ টাওয়ার’ নামের পাঁচ তলা ভবনসহ মুন্সীগঞ্জের কোর্টগাঁও মৌজায় দুই তলা ভবন নির্মাণ করেন। ২০২৩-২৪ আয়কর নথিতে তার নিট সম্পদের মূল্য ৯৩ লাখ ৩৯ হাজার ৬৫২ টাকা।
মো. শহিদুল ইসলাম শাহিন মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিম পৌরসভার গোয়ালঘুন্নী এলাকায় পাঁচ তলা বহুল ভবন নির্মাণ করেন। আফসার উদ্দিন ভূইয়ার বিরুদ্ধে সোয়া চার কোটি টাকার সেতু নির্মাণের অনিয়মের তথ্য পাওয়া যায়। সেতু নির্মাণের সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সঙ্গে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট আফসার উদ্দিন ভূইয়ার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেদের ও তাদের ওপর নির্ভরশীলদের নামে প্রচুর জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ রয়েছে।
ইতিপূর্বে ২০২৪ গত ৫ই আগস্ট সরকার পতনের পর আত্মগোপনে চলে গেছেন মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। তবে ৪ আগস্ট মুন্সীগঞ্জে শিক্ষার্থীদের ওপরে সশস্ত্র হামলায় তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনায় তাদের মুখ্য ভূমিকা রয়েছে বলে গোয়েন্দা সদস্যদের হাতে তথ্য-উপাত্ত রয়েছে এ পরিস্থিতিতে মহিউদ্দিন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের গতিবিধি সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রেখেছেন গোয়েন্দা সংস্থার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। সর্বশেষ গোয়েন্দা তথ্য বলছে,এ দম্পতি এখনও দেশেই অবস্থান করছেন। বিদেশে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। নিরাপদে থাকতে ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করছেন তারা।
উল্লেখ্য ; গত ৪ আগস্ট শহরের সুপারমার্কেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে জেলা সদরের চরাঞ্চল থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন,তার পুত্র সাবেক সংসদ সদস্য ফয়সাল বিপ্লব ও তার স্ত্রী মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র চৌধুরী ফাহরিয়া আফরিন ও মিরকাদিম পৌরসভার আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র শহিদুল ইসলাম শাহিনের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার জন্য অস্ত্র-ককটেল নিয়ে শহরে প্রবেশ করেন ২-৩ হাজার দলীয় নেতাকর্মী ও অনুসারী।আগেরদিনই তারা মোবাইল ফোন ও সাক্ষাতে এই নির্দেশ পান।ওইদিনের ঘটনায় ৩ জন নিহত ব্যক্তির নাম-পরিচয় পাওয়া যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মুন্সীগঞ্জ শহরের কৃষি ব্যাংক চত্বরে গুলিতে নিহত কয়েক জনের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার দলের এজাহারভুক্ত কয়েক শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কয়েকটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর আদালত ঘিরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত মামলার ঘটনায় আসামি জামিন না দেওয়ার হুশিয়ার দিলেন ছাত্র সমাজ এসময় আন্দোলনকারীরা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের সামনে ঘন্টাব্যাপী কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা।
মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শামসুল আলম সরকার বলেন, ‘তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে আসামিদের গ্রেপ্তারের সার্বক্ষণিক চেষ্টা চলছে।