মিরু হাসান, স্টাফ রিপোর্টারঃ বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিকে ঘিরে করে দুইপক্ষ পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছে। রবিবার (১১ আগস্ট) বিকালে বগুড়া প্রেসক্লাবে এবং শহরের সাতমাথায় দুইপক্ষ পৃথক দুই সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় তারা একে অপরকে ‘ভুয়া’ হিসেবে অভিযোগ করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি নিয়ে ধোয়াশা তৈরি হয়ে সমাজমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি কমিটিকে ঘিরে। সেখানে ১৫ জুলাই একটি কমিটি আত্মপ্রকাশের কথা জানানো হয়। ১৭ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটিতে সাতজন সমন্বয়ক এবং দশজন সহ-সমন্বয়ককে রাখা হয়।
এর মধ্যে শনিবার (১০ আগস্ট) সমন্বয়ক কমিটির সদস্য দাবি করা কয়েকজন শহরের একটি মিষ্টির দোকান থেকে টাকা ছাড়া দই ও মিষ্টি নিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সমাজমাধ্যম ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়ে। এই কমিটিকে ‘ভুয়া’ এবং ‘উদ্দেশ্যমূলক’ বলে দাবি করেন আন্দোলনে অংশ নেওয়া অপর একটি পক্ষ। পরে কমিটি নিয়ে ধোয়াশা কাটাতে রবিবার প্রথমে সংবাদ সম্মেলন ডাকে ১৭ সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটি। এরপর অপরপক্ষও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
সমন্বয়ক দাবি করা নিয়তি সরকার লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ১৬ জুলাই কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাহিন সরকার অনুমোদিত ১৭ সদস্যবিশিষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বগুড়া জেলা সমন্বয়ক কমিটি ব্যতীত বগুড়ায় অন্য কোনো জেলা সমন্বয়ক কমিটি নেই। আমাদের নিকট তথ্য এসেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ব্যবহার করে শিক্ষার্থী নামধারী কতিপয় অসাধু চক্র বগুড়ার বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি, হামলা, হুমকি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করছে। এছাড়া তারা শহরজুড়ে ট্রাফিক কন্ট্রোলের সাথে যুক্ত শিক্ষার্থীদের খাবার, পানি, ক্যাপসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয়, রং-ব্রাশ ক্রয় এবং গাছ ক্রয়ের নাম করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নগদ অর্থ আদায় করছে। যেখানে শুরু থেকে এ সময় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সাধারণ জনতা বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছায় সরবরাহ করেছে। এছাড়া আমরা বগুড়াবাসীকে অনেক পূর্বেই স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিলাম কোনো কিছু ক্রয়ের জন্য কারও সাথে কোন টাকা-পয়সা লেনদেন করবেন না। তবে কেউ চাইলে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, খাবার, পানি, গাছ ইত্যাদি দিয়ে সহযোগিতা করতে পারবেন।
আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে জানাচ্ছি যে, এই সব ঘটনার সাথে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এরকম কোনো ঘটনা ঘটতে দেখলে সেনাবাহিনীর পেট্রোল টিমকে ফোন করে তাৎক্ষণিক জানাবেন এবং সেই মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তারা দই মিষ্টি নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, গত ৯ আগস্ট সমন্বয়ক সাকিব খান পূর্ণমূল্য পরিশোধ করে এশিয়া সুইটস থেকে দই মিষ্টি ক্রয়ের সময় কিছু অসৎ উদ্দেশ্যে কিছু লোকজন তাদেরকে ঘেরাও করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে দিয়ে মিথ্যা কথা বলে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেছেন। এছাড়া গতকাল তাকে এবং সমন্বয়ক নিয়তিকে জোরপূর্বক জিলা স্কুল মাঠে তুলে নিয়ে গিয়ে গায়ে হাত তুলেছেন এবং মিথ্যা স্বীকারোক্তি নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। যে ব্যক্তি ৯ তারিখে এশিয়াতে তাদের ঘেরাও করে বক্তব্য দিয়েছেন তিনিই আজকে কিছু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে সাতমাথায় প্রেস ব্রিফিং করেছেন, শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করছেন। তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক।
এদিকে, আন্দোলনে অংশ নেওয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আরেক সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। এতে বক্তব্য দেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ইজাজ আল ওয়াসী। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বঘোষিত ‘ভুয়া’ কমিটির ১নম্বর সমন্বয়ক সাকিব এশিয়া সুইটসে গিয়ে ৩০ সরা দই এবং ১০ কেজি মিষ্টি দাবি করে বলে এগুলো কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের খাওয়াবে। কেউ কাউকে দই মিষ্টি খাওয়ালে আমাদের কোনো সমস্যা নেই কিন্তু একজন সাধারণ ব্যবসায়িকে বিক্রয়মূল্য প্রদান না করে সে এগুলো খাওয়ানোর এখতিয়ার কিভাবে রাখে?এছাড়াও তারা সমন্বয়ক পদবী ধারণকরে চাঁদা দাবি করে।
সাধারণত শিক্ষার্থীদের জেরার মুখে পড়ে তারা সব সত্য বলে স্বীকার করে এবং এশিয়াতে বিল প্রদান করে। এর ভিডিও প্রমাণ রেখে দেওয়ার জন্য ভিডিও চলাকালীন ২নম্বর স্বঘোষিত সমন্বয়ক নিয়তি সরকার নিতু আমার ফোন কেড়ে নেয়।
এসব চাঁদাবাজি রুখে দিতে বগুড়ায় আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই ‘ভুয়া’ সঘোষিত কমিটির বিলুপ্ত ঘোষণা করছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী ফাউজিয়া হক সুকন্যা বলেন, ‘বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কোনো কমিটি নেই। যারা দাবি করছে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। তারা কমিটির নামে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অপকর্ম করছে।