ডেক্স রিপোর্টঃ কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অন্যান্য নিহতদের স্মরণে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
সোমবার (২৯ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠক শেষে বিকালে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আজকের বৈঠকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি জানান, আজকের বৈঠকে কোটা আন্দোলন নিয়ে যে পরিস্থিতি হয়েছিল, সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। পরে এ নিয়ে আলোচনা হয়। সে আলোচনার ভিত্তিতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় এবং আগামীকাল মঙ্গলবার দেশব্যাপী শোক পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল রোববার (২৮ জুলাই) এ ঘটনায় ১৪৭ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিলেন। তারপর আরো তিনজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। অর্থাৎ, এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা এখন ১৫০।
অপরদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে সরকারঘোষিত রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করে কর্মসূচি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। নতুন কর্মসূচি অনুযায়ী মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) লাল কাপড়ে মুখ-চোখ বেঁধে প্রতিবাদ করবে তারা। পাশাপাশি অনলাইনে প্রচারণা চালাবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. মাহিন সরকার সোমবার (২৯ জুলাই) রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে নতুন এ কর্মসূচির কথা জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, নোয়াখালী, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, যশোর, ঠাকুরগাঁওসহ দেশব্যাপী সোমবারের কর্মসূচি সফল করার জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। একই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবিগুলোর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করার জন্য শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, শ্রমজীবী ও গণমানুষের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশজুড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে কেন্দ্র করে নির্বিচারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে শত শত শিক্ষার্থীর মৃত্যু এবং হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত হয়ে যখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে, তখনো শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে না নিয়ে একাত্তরের হানাদার বাহিনীর মতো মধ্যরাতে বাসাবাড়িতে ব্লক রেইডের মাধ্যমে নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে রিমান্ডের নামে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর নির্যাতন চালানো হচ্ছে।’
কর্মসূচির বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতনের বিচার না করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিদিন নির্মম উপহাস করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় শোককে প্রত্যাখ্যান করে আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) লাল কাপড় মুখ ও চোখে বেঁধে ছবি তোলা এবং অনলাইনে ব্যাপক প্রচার কর্মসূচি করার জন্য অনুরোধ করছি। বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি, একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে আপনারা কর্মসূচি সফলে সহযোগিতা করুন।’
সরকারের উদ্দেশে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ছাত্রসমাজের বুকে গুলি চালিয়ে বাংলার ইতিহাসে কোনো আন্দোলন দমন করা যায়নি। অবিলম্বে ছাত্রসমাজের ৯ দফা দাবি মেনে নিয়ে দেশকে স্থিতিশীল করুন।’