1. crimeletter24@gmail.com : crimelet_crimelet :
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
শহীদ নুরুল ইসলাম ফারুকী স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন রাজশাহীতে চাঁদাবাজ ও দখলদারদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি রাজশাহীতে সনাতন ধর্মাবলম্বীর বসতবাড়ি দখল ও প্রতিমা ভাঙচুরে আলতাব গ্রেফতার রাজশাহীতে দিন মুজুরের বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ,সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী। মুন্সীগঞ্জে নতুন জেলা প্রশাসক যোগদান বিদায়ী আবুজাফর রিপন বিপিএএ খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহসভাপতি বিল্লাল হােসেন রবিনের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির আনীত অভিযােগ মিথ্যা প্রমানিত পঞ্চগড়ে আট দফা দাবিতে সড়কে শুয়ে চা চাষীদের বিক্ষোভ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ৪৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী মুন্সীগঞ্জে আলোচিত জিল্লুর হত্যার দীর্ঘদিন পলাতক আসামি সম্পদ কারাগারে

শেখ হাসিনা বেঁচে আছেন বলেই দেশ আজ এগিয়ে চলছে – মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম)

  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২২ আগস্ট, ২০২১
  • ২৫০ ০৫ বার পঠিত

মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম) এর স্মৃতিচারণ -ঃ

সেদিন ছিল শনিবার, বিকাল চারটা। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও বোমা হামলার প্রতিবাদে শান্তি সমাবেশ চলছিল। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। 

হঠাৎ বিকট শব্দ! প্রথমে কিছু বুঝে উঠতে পারিনি। তারপরই শুরু হলো কান ফাটানো শব্দ, অসংখ্য গ্রেনেড বিস্ফোরিত হতে লাগল, চারদিকে গগনবিদারী আর্তনাদ! সেদিনের সেই হামলা ছিল ভয়াল, বীভৎস ও নাটকীয়, যা ভাবলে এখনো গা শিউরে ওঠে! বিএনপি-জামায়াতের সেই নৃশংস গ্রেনেড হামলায় সেদিন আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মীর তাজা প্রাণ ঝরে যায়। আহত হন শত শত নিরপরাধ-নিরীহ মানুষ।

সমাবেশস্থলে সেদিন একটি ট্রাকে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। অস্থায়ী মঞ্চে সাধারণত টেবিল রাখা হয় না। আমি সেদিন একটি টেবিলের ব্যবস্থা করেছিলাম, যাতে নেতাকর্মীদের ‘ধাক্কা’ নেত্রীর গায়ে না লাগে। সেই টেবিলই সেদিন ঘাতকদের ছোড়া গ্রেনেডের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করেছে। ঘাতকদের ভয়ঙ্কর সেই হামলা চলাকালে আমাদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা টেবিলের নিচে মাথা গুঁজে ছিলেন। আমরা মঞ্চে উপস্থিত কয়েকজন নেতা সেই টেবিল ঘিরে মানবঢাল তৈরি করি।

আল্লাহর অশেষ রহমত যে, শেখ হাসিনা ঘাতকদের গ্রেনেড হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যান। এখনো তিনি বেঁচে আছেন। বেঁচে আছেন বলেই বিএনপির দুর্নীতির আখড়া ‘হাওয়া ভবন’ ধ্বংস হয়েছে। দেশদ্রোহী ষড়যন্ত্র প্রতিহত হয়েছে এবং দেশ আজ বঙ্গবন্ধুকন্যার দৃঢ় নেতৃত্বে উন্নয়নের পথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে।

আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেদিন মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে। আহতদের আর্তনাদ ক্রমেই বাড়তে থাকে। আমরা নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) বাঁচাতে অস্থির। অনেকটা জোর করেই গাড়িতে তুলে নেত্রীর ব্যক্তিগত গাড়িচালক মতিনকে বললাম, ‘গাড়ি দ্রুত টান দাও।’ মতিন নেত্রীকে নিয়ে ছুটে চললেন ধানমণ্ডির সুধাসদনের দিকে। সামনের সিটে নেত্রী, পেছনে আমি, নিরাপত্তাকর্মী অ্যাটর্নি জেনারেল তারেক, জাহাঙ্গীর আর নজিব।

হঠাৎ বিপত্তি! নেত্রী যাবেন না। অনেকটা কঠিনভাবে তিনি বললেন, ‘গাড়ি থামাও, আমি সুধাসদনে যাব না। আমাকে নেতাকর্মীদের কাছে নিয়ে চলো। আমি তাদের ছেড়ে সুধাসদনে যেতে পারি না।’

বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের মৃত্যুকূপ থেকে সেদিন শেখ হাসিনাকে সুধাসদনে ফিরিয়ে নিতে অনেক কষ্ট হয়েছে। আমরা যখন গাড়িতে তখন গাড়ি লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো গুলি চলে। বুলেটপ্রুফ গাড়ি হওয়ায় সে যাত্রায়ও নেত্রী প্রাণে বেঁচে যান। তবে বিপত্তি ঘটে নেত্রীর গাড়ির চাকা গুলি লেগে পাংচার হয়ে যাওয়ায়। রাস্তায় আবারও হামলা হয় কি না সে আশঙ্কা আমাকে তাড়া করছিল। এরই মধ্যে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে হবে। কীভাবে যে কী করেছি! ভাবতেই এখন অবাক লাগে। 

সেদিন অস্থায়ী ট্রাকের মঞ্চে নেত্রীকে বাঁচাতে মানবঢাল তৈরি করেছিলাম ঠিকই, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে প্রাচীর স্থায়ী হয়নি। গ্রেনেড বিস্ফোরণের সময় মঞ্চে থাকা আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শেখ সেলিম, সাহারা খাতুন, মোহাম্মদ হানিফসহ আমরা নেত্রীকে ঘিরে মানবপ্রাচীর তৈরি করি, যেন নেত্রী আক্রান্ত না হন। কিন্তু গ্রেনেড বিস্ফোরণ বাড়তে থাকলে মঞ্চে থাকা অনেক নেতাই নেত্রীকে ছেড়ে নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে লাফিয়ে ট্রাক থেকে নেমে যান। যারাই ট্রাক থেকে নেমে গিয়েছিলেন, তারা প্রত্যেকেই সেদিন গ্রেনেড হামলার শিকার হয়েছেন, স্প্লিন্টারে বিদ্ধ হয়েছেন। আল্লাহর রহমতে একমাত্র নেত্রী আর আমি ট্রাকের ওপরে থাকায় অক্ষত থেকে যাই। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারগুলো মূলত নিচ থেকে সমান্তরালভাবে তীরবেগে ছুটে যায়। গ্রেনেডগুলো ট্রাকের আশপাশে বিস্ফোরিত হওয়ায় যারা নিচে ছিলেন তারা স্প্লিন্টারবিদ্ধ হন। 

সেদিন ঘাতকদের মূল টার্গেট জননেত্রী শেখ হাসিনা হলেও আল্লাহ নিজের হাতে তাকে বাঁচিয়েছেন। ব্যর্থ হয়েছে ঘাতকের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র।

যখন গ্রেনেড বিস্ফোরণের আওয়াজ শেষ হলো, চেয়ে দেখি চারদিকে নিহতদের নিথর দেহ পড়ে আছে। আহতদের চিৎকারে বাতাস ভারী। তাদের ধরার বা সাহায্য করার মতো কেউ নেই। নেত্রীর নিরাপত্তারক্ষীরা সব পালিয়েছে, শুধু তারেক গাড়ির গেট খুলে দাঁড়িয়ে আছে। আমার সঙ্গে ছিল নজিব, তারেক আর জাহাঙ্গীর। তারেকের স্প্লিন্টারের ক্ষত থেকে রক্তে গাড়ির সিট ভিজে গিয়েছিল। 

সেদিন নেত্রীকে জোর করে সুধাসদনে রেখে তার নির্দেশে একটি সাদা গাড়িতে করে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আসতে থাকি। যখন পিজি হাসপাতাল — আজকের বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের সামনে আসি, তখন দেখি সবাই ছোটাছুটি করছে। আমরা গাড়িতে আর এগোতে পারলাম না। 

আমি আর জাহাঙ্গীর সেখান থেকে দৌঁড়ে দলীয় অফিসে গিয়ে দেখি অনেককে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। কেউ এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছে। অনেকে হাত-পা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে আছে। রাস্তাঘাট একদম ফাঁকা। রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। পরে ভ্যানগাড়িতে করে আহতদের নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।

সেদিন পুলিশ প্রশাসনও অসহযোগিতা করেছে। সাধারণ জনগণের মধ্যে সেদিন যারা সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছিলেন তাদের টিয়ারশেল, গুলি ও লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, ফায়ার ব্রিগেড এনে পানি ঢেলে সব আলামত নষ্টের ব্যবস্থা করা হয়।
 
এই হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র একদিনে সৃষ্টি হয়নি। ১৯৭১, ১৯৭৫ ও ২০০৪ সালের হামলা একই সূত্রে গাঁথা। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে পাঁচ শতাধিক স্থানে বোমা ফাঁটানো কিন্তু চাট্টিখানি বিষয় নয়। এটাও একই সূত্রে আবদ্ধ। 

ষড়যন্ত্রকারী ও হামলাকারীদের টার্গেট ছিল জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ১৯ বার বোমা হামলা করা হয়েছে। আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি সব হামলা থেকে রক্ষা পেয়েছেন। 

আমি এখনো জননেত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে পারলে ঘাতকদের ষোলকলা পূর্ণ হবে। আমার প্রথম ও শেষ কথা — শেখ হাসিনা থাকলে বাংলাদেশ থাকবে, শেখ হাসিনা থাকলে গণতন্ত্র থাকবে, শেখ হাসিনা থাকলে দেশের উন্নয়ন হবে, এদেশের সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন থাকবে।

দেশ যেন শান্তিতে না থাকে, দেশ যেন পাকিস্তান হয়, দেশ যেন পিছিয়ে যায়, এজন্য বিএনপি-জামায়াত চক্র বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চায়। তারা জঙ্গি হামলা করে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায়। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতেই তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট এই হামলা করেছিল। 

ঘাতকদের এই ষড়যন্ত্র এখনো চলছে, ভবিষ্যতেও চলবে। এই ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করতে, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে, সর্বোপরি দেশের শান্তি ও উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ