বিশেষ সংবাদদাতা -ঃ- কুমিল্লায় ভূয়া ওয়ারেন্টের জমজমাট বানিজ্য চলছে।যার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এর ফলে হয়রানী ও সম্মানহানীর শিকার হচ্ছে ভূক্তভোগীরা। আদালত ও পুলিশের কেরানী পর্যায়ের একটি চক্র এর মাধ্যমে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে রুপান্তরিত হচ্ছে।
জানাগেছে গত ৬ মাসে কুমিল্লার বিভিন্ন থানায় পুলিশ সুপারের কার্যালয় হতে দায়রা জজ আদালত ঘুরে কোট ইন্সপেক্টরের মাধ্যমে প্রায় এক ডজন ভূয়া ওয়ারেন্ট তামিলের জন্য বিভিন্ন থানায় পৌছে।
এসব ওয়ারেন্ট বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট থানা দায়িত্বরত এসআই অভিযুক্ত আসামীদের বাড়ীতে হানা দেয়। মান সম্মানের ভয়ে তাদের অনেকেই তা ঢাকা দিয়েছে। সামাজিক আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কেউ কেউ।
পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট আদালতে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায় এ ধরনের মামলার অস্তিত্ব নাই। সীল, স্বাক্ষর, স্মারক, মামলা নং সবই ভূয়া।
প্রশ্ন হচ্ছে আদালত ও পুলিশের অনেকের ধাপে যাচাই বাছাইয়ের পর ওয়ারেন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি নথি কিভাবে থানা পর্যায়ে পৌছে? আদালত ও পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি তাদের অজ্ঞতা বলে চালিয়ে দিলে এর নেপথ্য রহস্য উদঘাটনে এখন পর্যন্ত দৃষ্টান্তমূলক কোন তদন্ত ও পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি।
দীর্ঘদিন ধরে এই ভূয়া ওয়ারেন্ট সৃজন চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গৃহীত না হওয়ায় দিন দিন দেশের বিভিন্ন থানায় ভূয়া ওয়ারেন্টের স্তুপ বেড়েই চলেছে। আদালত, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোরও এ ব্যাপারে উদাসীনতা লক্ষনীয়।
জানাগেছে ওয়ারেন্ট তামিলের জন্য পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গত ১৫/০২/২০২৩ কার্যালয়ে ডাইরীভুক্ত হয়। যা চট্টগ্রাম দায়রা জজ আদালত থেকেপ্রেরিত বলে সীল ছাপ্পরে দেখা যায়। ৫/৩/২৩ কোট ইন্সপেক্টরের মাধ্যমে লাকসাম থানায় আসে। যার সুত্রধরে লাকসাম পৌরসভার বাতাখালীর বাসিন্দা এম.এস. দোহাকে গ্রেফতার করতে যায়। যাতে চট্রগ্রামের জেলা দায়রা জজ আদালতের ২০২১ সালের মাদক মামলার আসামী দেখানো হয়েছে।
অভিযুক্ত আসামী বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করেন। সংশ্লিষ্ট দারোগা আনোয়ার ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমানকে এ ব্যপারে যাচাই, বাছাই ও খোঁজ খবর নিতে বলেন। আর এর মাধ্যমে থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ে। পুলিশ নিশ্চিত হয় এটি ভূয়া। চট্টগ্রাম দায়রা জজের সীল, স্বাক্ষর, স্মারক সবই জাল।লাকসাম থানা পুলিশ এই ব্যপারে একটি জিডি নথিভূক্ত করে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, ২ মাসেও এই ভূয়া ওয়ারেন্ট সৃজনকারী চক্রের সন্ধান পায়নি পুলিশ। এনিয়ে মামলা, তদন্ত, অনুসন্ধান রহস্যজনক কারনে অগ্রগতি হয়নি।
কুমিল্লা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গত ১৫.২.২০২৩ ওয়ারেন্টের কপিটি প্রাপ্তির চিঠির খাম ও নথি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ওয়ারেন্টটি আদৌ চট্টগ্রাম থেকে প্রেরিত নাকি কুমিল্লা থেকে সৃজন করা তা পর্যালোচনার দাবী রাখে।
তাই পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি এ ব্যাপারে জুডিশিয়াল তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে ভূয়া ওয়ারেন্ট চক্রকে সনাক্ত ইতিবাচক ফলাফল আসবে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
এদিকে সোস্যাল মিডিয়া ও ফেইসবুকের কল্যানে এই জালিয়াত চক্রের কিছু তথ্য সাপ্তাহিক সবুজপত্রের কাছে এসেছে। মোঃ ইসমাইল নামক এক প্রবাসীর ফেসবুক থেকে প্রথম এই ভূয়া ওয়ারেন্ট পোস্ট করা হয়। যা তৎক্ষনাৎ তার রুমমেট লামসাম পৌরসভার বাতাখালী পূর্বপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলীর ছেলে মোঃ দেলোয়ার হোসেন স্ক্রীন শট দিয়ে পুনরায় পোস্ট করে।প্রশ্ন হচ্ছে জালিয়াতি চক্রের সাথে যোগাযোগ না থাকলে তাদের কাছে এই ভূয়া ওয়ারেন্ট কিভাবে পৌছালো?
ভূয়া ওয়ারেন্টটিকে সঠিক হিসেবে ফেইসবুকে দাবী করেছেন লাকসাম পৌরসভার বাতাখালী মধ্যপাড়ার বাসিন্দা বাহারাইন প্রবাসী মৃত আবদুল লতিফ খলিফার ছেলে মোশারফ হোসেন মশু। তার মতে ইয়াবার চালান কক্সবাজারে বহুল আলোচিত বদি কুমিল্লা অঞ্চলের জন্য দোহার কাছে পাঠিয়েছেন। পুলিশে তদন্ত ও যাচাই বাছাইয়ের পর আসামী হিসেবে এম.এস. দোহার নাম এসেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে এই ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয় বলে তিনি দাবি করেন। সুতরাং মোশারফ হোসেন মশু এই ওয়ারেন্টটির ব্যপারে কিভাবে এতাটা নিশ্চিত হলেন তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ দরকার। যার মাধ্যমে অনেক অজানা তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।