তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি -ঃ- রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী মান্দা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দেয়া শাস্তির খড়গো সইতে না পেরে স্ট্রোক করে মারা গেছে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রধান শিক্ষক এম রেজাউল হক বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও মৃত্যুর ওপর কারো হাত নাই, তার পরেও এই শিক্ষকের অকাল মৃত্যুতে পরিবার ও স্বজনেরা অভিযোগের তীর ছুড়েছে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল বাসার শামশুজ্জামানের দিকে। এঘটনায় স্থানীয় সুশীল সমাজ ও অভিভাবক মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, মান্দার আলালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম রেজাউল হক শারীরিক অসুস্থতার কারণে দু’দফায় ৬ মাসের ছুটিতে চিকিৎসাাধী ছিলেন। তবে সুস্থ হয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি চাকরিতে যোগদান করেন। এমনকি গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিনি বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিত ছিলেন বলে নিশ্চিত করেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা।
কিন্তু অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে এর পরও তাঁর যোগদানকালিন নিয়মিত বেতনভাতা বন্ধ করে দেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকতা আবুল বাশার সামসুজ্জামান। ঈদ-উল-ফিতরেও তাঁকে বেতন-বোনাস দেওয়া হয়নি। যে কারণে স্ত্রী ও দুটি শিশু সন্তান নিয়ে ঈদ উৎসব পালন করতে না পেরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে শিক্ষক রেজাউল। শিক্ষা কর্মকর্তার শাস্তির পর মানসিক চাপ সহ্য করতে না পের শনিবার স্ট্রোক করলে তাঁকে নেওয়া হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অসুস্থ রেজাউল তার স্বজনদের বলেছিলেন তার এই অবস্থার জন্য শিক্ষা কর্মকর্তা দায়ী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক এম রেজাউল হক মান্দার কুসুম্বা ইউনিয়নের (ইউপি) বিলকরিল্যা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২০১০ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আলালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর বাবা মৃত বসরতুল্যা প্রামাণিক খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। দেশের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রেজাউল হকের ওপর শিক্ষা কর্মকর্তার এমন আচরণে স্থানীয় এলাকাবাসী ও সচেতন মহলের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষক রেজাউল হকের স্ত্রী পান্না খাতুন বলেন, অসুস্থজনিত কারণে তার স্বামী রেজাউল হক গত বছরের ২২ আগস্ট তিন মাসের ছুটির আবেদন করেন। সুস্থ না হওয়ায় ছুটি আরও তিন মাস বাড়ানো হয়। চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি চাকরিতে যোগদান করেন। পান্না খাতুন অভিযোগ করে বলেন, চাকরিতে যোগদানের পর বেতনভাতার জন্য স্বামী রেজাউল হক উপজেলা শিক্ষা অফিসে দিনের পর দিন ধর্ণা দিয়েছেন। কিন্তু শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল বাশার সামসুজ্জামান অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে বিভিন্ন অজুহাতে তাঁকে হয়রানী করতে থাকেন। একপর্যায়ে বিলবেতন পাসের জন্য অফিস আমার স্বামীর কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করে। পরে বাড়িতে থাকা ছোট্ট একটি ছাগল বিক্রি ও ধার করে ৫ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয় অফিসের সেই ব্যক্তির হাতে। দাবি পুরন না হওয়ায় ঈদের আগে বেতন-বোনাস পাস করেন নি। পান্না খাতুন আরও বলেন, বেতন-বোনাস উত্তোলন করতে না পেরে স্বামী রেজাউল হক মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। প্রচণ্ড মানসিক চাপে স্ট্রোক করলে তাঁকে রাজশাহী হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার তিনি মারা যান। তিনি এবিষয়ে
বিচার বিভাগীয় তদন্ত কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল বাশার সামসুজ্জামান হয়রানীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মেডিকেলের কাগজপত্র ও ছুটির আবেদন ছাড়াই ছয় মাস ধরে প্রধান শিক্ষক রেজাউল হক বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে কাগজপত্র সঠিকভাবে উপস্থাপন করায় তা অনুমোদনের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে প্রেরণ করা হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অনুমোদন ছাড়াই তিনি বিদ্যালয়ে যোগদান করতে পারেন না। তিনি বলেন, মৃত্যুর ওপর কারো হাত থাকে না।