মোঃ এমরান, বান্দরবান প্রতিনিধি -ঃ- গত ২৬-১-২০২৩ ইং তারিখ দিবাগত রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ০৮ (আট)টি ট্যুরিষ্ট দলে সর্বমোট ৬১ জন পর্যটক বান্দরবানের আলীকদম থানা এলাকায় মারাইংতং এ রাত্রী যাপনের উদ্দেশ্যে স্থানীয় গাইড ইয়াছিন এর সাথে যোগাযোগ করে এবং আলীকদম এর মারাইংতং পাহাড়ে রাত্রী যাপনের জন্য উপস্থিত হয়।
আলীকদম উপজেলা প্রশাসন পূর্ব থেকে মারাইংতং পাহাড়ে বিকাল ৫.০০ ঘটিকার পর থেকে অবস্থান নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও স্থানীয় গাইড ইয়াছিন উক্ত বিষয়টি পর্যটকদের কাছে গোপন করে মারাইংতং পাহাড়ে রাতে ক্যাম্পেইনের জন্য চুক্তি করে পর্যটকদের কাছে থেকে অগ্রিম টাকা নেয়।
পরবর্তীতে পর্যটকরা মারাইংতং আসলে স্থানীয় গাইড ইয়াছিন ও তার সহযোগীরা পর্যটকদেরকে মারাইংতং এর চেয়ে সুন্দর ভিউ এবং উঁচু পাহাড়ের ক্যামপেইনের আশ্বাস দিয়ে লামা থানার মিরিঞ্জা এলাকায় নিয় আসেন।
ইয়াছিন মিরিঞ্জা পাহাড়ে ক্যাম্পেইনের নামে গহিন জঙ্গলের ভিতর দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে নিয়ে যায় এবং পর্যটকদের মিরিঞ্জায় তাবুতে থাকার ব্যবস্থা করে। নূন্যতম সুযোগ সুবিধা না থাকায় পর্যটকদের সেখানে নিরাপত্তার অভাব বোধ করে। এই বিষয়ে গাইড ইয়াছিন এর কাছে নিরাপত্তার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করিলে ইয়াছিন ও তার সহযোগীরা পর্যটকদের সাথে খারাপ আচরণ করতে থাকে। এতে পর্যটকদের অনেকেই ভয় পেয়ে যায়।
ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ কলেজের ইন্টারমিডিয়েট এর ছাত্র পর্যটক আইমান মাসনুন হুদা তার আত্মীয়-স্বজনদেরকে জানাইলে আইমান হুদার আত্মীয় বিষয়টি লামা থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম চৌধুরী’কে অবহিত করে এবং পর্যটকদেরকে উদ্ধার করার জন্য অফিসার ইনচার্জকে অনুরোধ করে।
উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে গত ২৬-০১-২০২৩ইং তারিখ রাত ০২:১০ ঘটিকার সময় অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে লামা থানা পুলিশের কয়েকটি অভিযানিক টিম দূর্ঘম মিরিঞ্জার গহিন জঙ্গলে গিয়ে দেখেন যে, পর্যটকরা যেখানে রাত্রী যাপনের জন্য ক্যাম্পেইন করেছেন সেখানে প্রায় সময় বন্য হাতি চলাচল করে এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি আছে।
পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে তাদের উদ্ধার করে গভীর রাতে ০৪ খোলা ট্রাক ব্যবস্থা করে লামা থানায় নিয়ে আসেন।
অফিসার ইনচার্জের তত্বাবধনে সকল পর্যটকদের জন্য খাবার পানি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয় এবং পর্যটকদের নিরাপদ রাত্রী যাপনের জন্য লামা থানা কম্পাউন্ডের সামনে তাবু টাঙ্গিয়ে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। পর্যটকদের মধ্যে একজন অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাঁকে দ্রুত পুলিশের সহায়তায় লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
অফিসার ইনচার্জ সকল পর্যটকদের থানায় অবস্থানকালে সার্বক্ষনিক খোঁজ-খবর নেন। গাইড ইয়াছিন এর দ্বারা হেনস্থার স্বীকার হওয়া ৬০ জন পর্যটকদের জন্য অফিসার ইনচার্জের পক্ষ থেকে পরের দিন সকালে গরম খিচুড়ি ও ডিমের ব্যবস্থা করা হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও অন্যান্য স্থান থেকে আগত পর্যটকদের অধিকাংই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র।
উল্লেখ্য যে, ঢাকা কলেজ, চুয়েট, ক্যান্টমেন্ট ইংলিশ কলেজ চট্টগ্রাম, বেপজা কলেজ, চট্টগ্রাম এর শিক্ষার্থীগন লামা থানা পুলিশের পর্যটক বান্দব সুন্দর আচরনের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ করেন।
এছাড়াও গাইড ইয়াছিন এর কাছ থেকে পর্যটকদের দেওয়া অগ্রীম টাকা উদ্ধার করে পর্যটদেরকে ফেরৎ দেওয়া হয়েছে।
লামা থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম চৌধুরী, ভবিষ্যতে বান্দরবান জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ক্যাম্পেইন এর আয়োজন করার ক্ষেত্রে পূর্বে থেকে নিরাপত্তার বিষয় ভাবার অনুরোধ করেন।
লামা থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর এমন আচরণ দেখে সবাই মুগ্ধ হন, সেই সাথে অফিসার্স ইনচার্জ এর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘ওই স্কুল ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত ও মারধর করার বিষয়টি জানতে পেরেছি। সামাজিকভাবে মীমাংসার জন্য ডাকা হলেও অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।’
আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসাদুল ইসলাম জানান, ছাত্রীর মা এ বিষয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা।