মোঃ আব্দুল হামিদ সরকার, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি -ঃ- নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পচারহাট এলাকায় গত শনিবার (১৭- ডিসে/২২) বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার এবং এলাকাবাসীর সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় বুধবার (২০-ডিসে/২২) রাতে ডিমলা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে পাউবো কর্তৃপক্ষ।
জলঢাকা পওর উপ-বিভাগ-২ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান এই প্রতিবেদকে নিশ্চিত করে বলেন, জলঢাকা পওর শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. একরামুল হক বাদী হয়ে ৭৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৬ থেকে ৭ শত জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।
এদিকে মামলা দায়েরের পর থেকেই পচারহাট এলাকায় গ্রেফতার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। মামলার কারণে অনেক পুরুষ এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার (১৭ই ডিসেম্বর) ৬৪টি জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল, জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় ডিমলা উপজেলার পচারহাট এলাকায় নীলফামারী পওর ও স্ট্যান্ডার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে সীমানা নির্ধারণ ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা এবং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নেন। কাজ শুরুর একপর্যায়ে স্থানীয় বাসিন্দারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আর এই আকস্মিক সংঘর্ষে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একটি এস্কেভেটর (ভকু), ৩টি সিক্স সিলিন্ডার মেশিন, দুইটি থ্রি সিলিন্ডার মেশিন, দুইটি মোটরবাইকে বিক্ষুব্ধ জনগণ আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়াও দুই/তিনটি মোটরবাইক ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একটি দুই চালা টিনের ঘর ভাঙচুর করে স্থানীয় মানুষজন। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়নের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ফায়ার সার্ভিসের ডিমলা ডিফেন্সের ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণ করে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মমিনুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, এলাকাবাসির অতর্কিত হামলায় একটি এস্কেভেটর (ভেকু), তিনটি সিক্স সিলিন্ডার মেশিন, দুইটি শ্যালো মেশিন, একটি মোটরবাইকে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া আরো দুইটি মোটরবাইকসহ প্রতিষ্ঠানের একটি টিনের ঘর ভাংচুর করে। এতে প্রায় দুইকোটি ৫০ লক্ষ টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
এলাকাবাসীর দাবি, নদী পুনঃখননে তাদের কোনো বাধা নেই, আমরা নদী পুনঃখননের পক্ষে সহায়তা করতে রাজি আছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী পুনঃখনন না করে জমি দখলে নিচ্ছে। এই জমি নিয়ে আমাদের মহামান্য হাইকোর্টে দুইটি ও নীলফামারী নিম্ন আদালতে তিনটি মামলা চলমান রয়েছে। পাউবো আমাদের বিরুদ্ধে একাধিক গায়েবি মামলা রুজু করেছে। এটাও তার মধ্যে একটি।
ইতিপূর্বে নীলফামারী পওর বিভাগ ৩২ জনের নামে একটি একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। এই মিথ্যা মামলায় বর্তমানে ২৫ জন নিরীহ মানুষ জেলহাজতে রয়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, জমি অধিগ্রহণের কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেন তাহলে জমি ছেড়ে দিবো। ডিসি স্যার তাদের কাছে জমি অধিগ্রহণের কাগজ দেখতে চেয়েছেন তারা দেখাতে পারে নাই।
তারা আরও বলেন, জলঢাকা উপজেলার (চিড়াভিজা গোলনা, খারিজা গোলনা), ডিমলা উপজেলার (পচারহাট, বাবুরহাট, কুটির ডাঙ্গা) এই ৫ মৌজায় প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার লোকের বসবাস। অন্যায় ভাবে উচ্ছেদ করলে কোথায় আশ্রয় নিবো, কিভাবে চলবো, কি খেয়ে বাঁচবো।
নীলফামারী পওর বিভাগের মতে, পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে ১৯৬৯-১৯৬৭ সালে মোট ১ হাজর ২শ ১৭ একর জমি তৎমধ্যে ডিমলা এলাকার তিন মৌজায় ১ হাজার ৯ একর অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
ডিমলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লাইছুর রহমান জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় নীলফামারী পওর বিভাগ ৭৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৬ থেকে ৭ শত জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে। প্রকৃত অপরাধী শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।