মইনুল ভূইয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া -ঃ- ১৯৭৩ সালের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়নি। সারাদেশে যখন আওয়ামী লীগের জোয়ার তখনও (২০১৮) জোটের মারপ্যাঁচে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ায় সেখানে নিজেদের প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। এ অবস্থায় বিএনপি দলীয় প্রার্থী উকিল আব্দুস সাত্তার ভ‚ঁইয়া জয়লাভ করেন। তিনি এ আসন থেকে পাঁচবারের সংসদ সদস্য।
ওই নির্বাচনে জামানাত হারায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলটির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম। দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে সেখানে জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করেন রেজাউল ইসলামের শশুর সাবেক এম.পি জিয়াউল হক মৃধা। দলীয় ও ব্যক্তিগত অবস্থান বিবেচনায় সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন আওয়ামী লীগ মাঈন উদ্দিন মঈন।
রাজনৈতিক বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি দলীয় যে সাতজন সংসদ সদস্য পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এর মধ্যে রয়েছেন আব্দুস সাত্তার ভ‚ঁইয়া। যে কারণে সরাইল ও আশুগঞ্জে এখন ভোটের ডামাঢোল। এবার এ ‘ইতিহাস’ বদলানোর সুযোগ আওয়ামী লীগের।
এমনিতেই জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের টানাপোড়েন। জাতীয় পার্টির নেতাদের অনেকেই বলছেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে এবার জোট হচ্ছে না। ভোটে থাকছে না বিএনপি। ইসলামী ঐকজোটের কেউও সেভাবে মাঠে নেই। যে কারণে এবার জোটের মারপ্যাঁচে পড়তে চায় না আওয়ামী লীগ। ৫০ বছরের ইতিহাস বদলানোর সুযোগ দলটি কাজে লাগাতে পারবে কি-না সেটিই এখন আলোচনার বিষয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা বেশ বড় হতে পারে বলে ধারণা পাওয়া যায়।
সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন। সরাইল উপজেলায় প্রায় দুই লাখ এবং আশুগঞ্জে প্রায় এক লাখ ভোটার রয়েছে। ২০১২ সালের ২১ অক্টোবর আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম ইকবাল আজাদ হত্যাকাÐের পর সরাইলে একপ্রকার অস্তিত্ব সংকটে পড়ে দলটি। আর এ সুযোগ কাজে লাগায় জাতীয় পার্টি; যদিও জাতীয় পার্টি সেখানে সুদৃঢ় কোনো অবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। শুধু সংসদ সদস্য কেন্দ্রিক তৎপরতা ছিলো দলটির। বিগত সংসদ নির্বাচনে সেখানে জাতীয় পার্টি থেকে রেজাউল ইসলামকে মনোনয়ন দিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থন দেয়। তবে ওই সময়কার জাতীয় পার্টির এম.পি জিয়াউল হকও ভোটে দাঁড়ান। জিয়াউল হক ও রেজাউল ইসলাম সম্পর্কে শশুর-জামাই। এতে দুইভাগে ভাগ হয়ে যায় জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মনোনয়ন না পাওয়া ও জাতীয় পার্টির মধ্যে বিরোধের সুযোগে সেখানে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জয়লাভ করে। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা মাঈন উদ্দিন মঈন ভোটের দিন মারধরেরও শিকার হন সেখানে। তবে আশুগঞ্জ ও সরাইলে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের নির্বাচন হওয়ার পর দলীয় বিরোধ দুই উপজেলায় কিছুটা কমেছে। যে কারণে এ সময়টাকে আওয়ামী লীগের জন্য বেশ সুযোগ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
বিগত সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মাঈন উদ্দিন মঈন বলেন, ‘এখানে আগে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কনফার্ম করতে হবে। ১৯৭৩ সালের পর এখানে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নেই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন যেন এখানে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এতে পিছিয়ে পড়া এলাকা এগিয়ে যাবে।’ মাঈন উদ্দিন মঈন এবারও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান।
সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ও সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক উম্মে ফাতেমা বেগম শিউলী আজাদকে (প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদের স্ত্রী ) ফোন করা হলে একাধিকবার কল ওয়েটিং পাওয়া যায়। সন্ধ্যা পৌণে ছয়টার তিনি কল ব্যাক করলে এ বিষয়ে বক্তব্য চাইলে বলেন, ‘আমি তো বাইরে আছি। এখন তো এ নিয়ে কিছু বলতে পারবো না।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকার সোমবার সন্ধ্যায় দৈনিক গণজাগরণ কে বলেন, ‘একাধিকবার জাতীয় পার্টির এম.পি ওই আসন থেকে পাস করার পর সেখানে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। কিন্তু সর্বশেষ নির্বাচনে তাদের প্রার্থী জামানত হারায়। ওই সময়ে বিএনপি প্রার্থী পাস করাসহ আগে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পাস না করায় সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা একেবারেই উন্নয়ন বঞ্চিত। এসব কারণে আমরা চাই এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসুক। সেখানকার স্থানীয় সম্মেলনেও আমি কথাটা বলেছি। তবে যদি কেন্দ্রীয়ভাবে অন্য কোনো সিদ্ধান্ত হয় তাহলে ভিন্ন বিষয়।’