রিয়াজুল হক সাগর, রংপুর জেলা প্রতিনিধি -ঃ রংপুরের বদরগঞ্জে বিএডিসি’র একটি ব্রিজ নির্মাণে খামখেয়ালিপনার কারণে রামনাথপুর ও রাধানগর ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ওইসব এলাকায় সদ্য রোপণ করা আমনক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এরই মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বিএডিসি’র প্রকল্প পরিচালকসহ স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। কিন্তু বিষয়টির সুরাহা না হওয়ায় ওই সব এলাকার মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, মাত্র আটটি পরিবারের জন্য পৌর এলাকায় গড়ডাঙ্গি নদীর যুগীপাড়ায় একটি ত্রুটিপূর্ণ ব্রিজ নির্মাণ করেছে বিএডিসি। ওই ব্রিজের নিচ দিয়ে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় রামনাথপুর ইউনিয়নের উত্তর রামনাথপুর, দক্ষিণ রামনাথপুর, দক্ষিণ মুকসুদপুর এলাকার বানুয়া, বটপাড়া, ফাটকের ডাঙ্গা, নলুয়ার ডাঙ্গা সিট লক্ষণপুর, চকমানাই, প্রামানিকপাড়া এবং রাধানাগর ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিপাতে এসব এলাকার কয়েক হাজার একর আমন ক্ষেত এখন পানির নিচে তলিয়ে আছে। বানুয়া এলাকার মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আমি অসুস্থ মানুষ কাজ করতে পারি না। ধারদেনা করে অনেক কষ্টে ৪৫ শতাংশ জমিতে আমন চারা লাগিয়েছিলাম। কিন্তু সেই জমি এখন পানির নিচে, চারাগুলোও পঁচে নষ্ট হয়েছে। দক্ষিণপাড়ার গোলজার হোসেন, মোবারক হোসেন বলেন, চার একর জমিই আমার সম্বল। ভাল ফলনের আশায় আগেভাগেই চারা রোপণ করেছিলাম। কিন্তু নিমিষেই সব শেষ হয়ে গেল। হুমায়ুন কবীর বাঙ্গা বলেন, আমি ইটভাটায় কাজ করে যা পেয়েছি তার সবটাই জমিতে খরচ করছি। এখন আমি নতুন করে জমি চাষ করব কিভাবে।
আওয়ামীলীগের প্রবীণ নেতা রওশন আলী বলেন, ব্রিজটি নির্মাণের সময় বারবার ত্রুটি ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেননি বিএডিসি’র কর্মকর্তারা। বরং তারা ধমকের সুরে বলেছেন ‘আপনারা বেশি বোঝার চেষ্টা করবেন না।’ রামনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ালীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বলেন, বিএডিসি যা’ করেছে তা’ কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কারণ সাধারণ মানুষের সম্বলই হল জমির ধান। সেই ধান যদি ঘরে না ওঠে তাহলে তারা বাঁচবে কি করে।
যুগীপাড়ার স্বাধীন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ব্রিজ নির্মাণের জন্য যে স্থান নির্বাচন করা হয়েছিল তা’ সংকুচিত করে ফেলার পাশাপাশি ব্রিজের তলদেশ আট ফুট উঁচু করা হয়েছে। ফলে বৃষ্টির পানি ফুলেফেঁপে নানা জায়গায় বন্যার সৃষ্টি করেছে।
এ বিষয়ে বিএডিসি’র উপসহকারী প্রকৌশলী ভবতোষ রায় বলেন, নদীতে পানি ধরে রাখার জন্য ব্রিজের তলদেশ উঁচু করা হয়েছে। কিন্তু এটাই যে কাল হবে সেটা তখন বুঝতে পারিনি।
এদিকে প্রকল্প পরিচালক সঞ্চয় সরকার বলেন, এক বছর আগে ব্রিজটির আকার বড় করে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু তীব্র ভাঙনের কারণে বুয়েটের প্রকৌশলীদের পরামর্শে সেটির আকার ছোট করা হয়। দু’দিকে গাইড ওয়াল নির্মাণ করে ব্রিজটিকে সুরক্ষিত করা হয়। ব্রিজের উজানে যাতে সব সময় পানি থাকে সেজন্য ব্রিজের তলদেশ উঁচু করা হয়েছে। আপাতত দু’পাড় কেটে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি করা করা হবে। এরপর প্রয়োজন হলে ব্রিজের উঁচু তলদেশ সমান করা হবে।