এ,কে,এম বেলাল উদ্দিন, চকরিয়া(কক্সবাজার) প্রতিনিধি -ঃ চকরিয়া
কক্সবাজারের চকরিয়ায় অব্যাহত টানা ভারীবর্ষণে ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি বৃদ্ধি পেয়ে দুটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ৫০ হাজার পরিবার পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে। লোকালয়ে বানের পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় তলিয়ে যাচ্ছে ক্ষেতের ফসল। পানিতে ভেসে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে উপজেলার চিংড়ি জোনের মৎস্য প্রকল্পসমূহ। তাতে পানিতে তলিয়ে যেতে পারে শত কোটি টাকার বিপুল পরিমাণ মাছ, এমন আশংকা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
অপরদিকে সড়ক-উপসড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় নৌকায় চলাচল করছে মানুষ। ২৯ জুলাই সকাল ১০টায় চকরিয়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের হালকাকারা গ্রামের নাজেম উদ্দিনের শিশু পুত্র আরবাবুল ইসলাম বানের পানিতে পড়ে মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার রাত থেকে শুরু হওয়া টানা ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার কারণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি নিচের দিকে নেমে আসায় বৃহস্পতিবার সকালের দিকে মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদ সামীর উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া উপজেলার বদরখালী শাখা কর্মকর্তা (এসও) জামাল মোর্শেদ।
তিনি বলেন, রবিবার রাত থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার কারণে উজানে লামা-আলীকদমের পাহাড় থেকে পানি নিচের দিকে নেমে আসায় সকাল ৯টার দিকে মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমা ৬ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার অতিক্রম ৭ দশমিক ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাউবোর কর্মকর্তা জামাল মোর্শেদ বলেন, ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে চকরিয়া উপজেলার বিশেষ করে উপকুলীয় অঞ্চলের অবস্থা নাজুক হতে পারে। মাতামুহুরী নদীতে পানি প্রবাহের কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীন চকরিয়া উপজেলার বিএমচরের কইন্যারকুম সকালে ও কোনাখালী ইউনিয়নের মরংঘোনা পয়েন্টে বিকেলে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে যায়। তবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পানি আরও বাড়বে, তাতে বেড়িবাঁধের চরম ক্ষতিসাধন হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা গেছে, টানা ভারিবর্ষণে চলতি মৌসুমে মাতামুহুরী নদীর তীরের জনপদ সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, বরইতলী, সাহারবিল, চিরিংগা, কৈয়ারবিল ইউনিয়ন এবং চকরিয়া পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের নিন্মাঞ্চল হাটু থেকে কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে।
উপজেলার পশ্চিমাংশের রেল লাইনের উঁচু রাস্তাটির কারণে ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে হারবাং, বরইতলী, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, পূর্ববড় ভেওলা, পশ্চিম বড় ভেওলা, বিএমচর, সাহারবিল, চিরিঙ্গা, ফাঁসিয়াখালী, ডুলাহাজারা, খুটাখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে। তার ওপর ভারী বর্ষণ ও বানের পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় তলিয়ে যাচ্ছে ক্ষেতের ফসলও।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, লাগাতার বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে উপজেলার চিংড়ি জোনের মৎস্য প্রকল্পসমূহ পানিতে তলিয়ে গিয়ে কোটি কোটি টাকার বিপুল পরিমাণ মাছ পানিতে ভেসে যাওয়ার আশংকা দেখা দেবে।
বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল সিকদার বলেন, ভারী বর্ষণে আমাদের এলাকার বেশিভাগ নিম্মাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। অভ্যন্তরীণ বেশকিছু গ্রামীণ সড়ক পানিতে ডুবে রয়েছে। বুধবার সকাল থেকে ইউনিয়নের প্রায় চার হাজার মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় বেড়িঁবাধ ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৬৫/এ-৩ পোল্ডারের তিনটি পয়েন্টে ভাঙ্গা রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে যদি মেরামত করা না হয় তাহলে ইউনিয়নের প্রায় পনের হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হবে।
চকরিয়া পৌরসভার মেয়র মো.আলমগীর চৌধুরী বলেন, টানা বৃষ্টিতে পৌরসভার নীচু এলাকার কয়েকটি গ্রাম ও তিনশতাধিক পরিবার জলাবদ্ধতার কাছে জিন্মি হয়ে পড়েছে। আটকে থাকা পানি যাতে দ্রুত নেমে যায় সেজন্য ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে।
কোণাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার বলেন, ভারিবর্ষণে ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বুধবার সকালে ইউনিয়নের কোনাখালী ইউনিয়নের মরংঘোনা পয়েন্টে বিকেলে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে যায়।এই অবস্থায় বিপদসীমা অতিক্রম করে উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের পানিও নামতে শুরু করেছে মাতামুহুরী নদীতে। এতে ব্যাপক ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখিন হবেন উপকূলীয় সাত ইউনিয়নের মানুষ।
মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পশ্চিম বড় ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা বলেন, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে। ভারিবর্ষণ অব্যাহত থাকলে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের চিংড়িজোন পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। এতে শত শত কোটি টাকার মাছ পানিতে ভেসে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ‘ভারি বর্ষণ এবং মাতামুহুরী নদীতে নেমে আসা উজানের পানি যাতে দ্রুত ভাটির দিকে নেমে যেতে পারে সেজন্য উপকূলীয় এলাকার সকল সুইচগেট গুলো খুলে দিতে সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, পানিবন্দী পরিবারের মাঝে সহায়তা হিসেবে বিতরণের জন্য ১৮টি ইউনিয়ন পরিষদকে উপজেলা প্রশাসন থেকে ইউনিয়নে ৪ চার টন করে ৭২ টন চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১শত বস্তা চিড়া, ২শত কেজি খেজুর ও সমপরিমাণের গুড জনপ্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।